IQNA

পশ্চিমবঙ্গে পবিত্র আশুরার দিন প্রতিমা বিসর্জন বন্ধের নির্দেশ দিল মমতা

20:05 - September 17, 2017
সংবাদ: 2603853
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পশ্চিমবঙ্গে পবিত্র আশুরার দিন প্রতিমা বিসর্জন বন্ধ রাখার নির্দেশ ছিলো রাজ্য সরকারের। তবে এ নিয়ে রাজনীতি তুঙ্গে উঠেছে। আশুরার জন্য একাদশীতে দুর্গাপ্রতিমার বিসর্জন কেন বন্ধ থাকবে, প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার।
পশ্চিমবঙ্গে পবিত্র মহরমের দিন প্রতিমা বিসর্জন বন্ধের নির্দেশ দিল মমতা
বার্তা সংস্থা ইকনা: শুক্রবার এ নিয়ে একটি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রে মন্তব্য করেছেন, ‘‘মুম্বইতে গণেশ পুজোর শোভাযাত্রা ও অন্য ধর্মীয় মিছিল এক সঙ্গে রাস্তায় বেরোয়।’’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য শনিবার ফের জানিয়ে দিলেন, আশুরার দিন বিসর্জন হবে না। তাঁর কথায়, ‘‘সব ধর্মের মানুষের কথা ভেবে, সব দিকে শান্তি বজায় রাখতেই এই সিদ্ধান্ত। বিসর্জন ও এ বছর দশমী পড়েছে ৩০ সেপ্টেম্বর। পরের দিন, ১ অক্টোবর পবিত্র আশুরা তথা মুহাররম মাসের ১০ তারিখ। নবান্নের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত ছিল, দশমীর দিন সন্ধে ৬টার পর থেকে ১ অক্টোবর পুরো দিন বিসর্জন বন্ধ থাকবে। ফের ২ থেকে ৪ অক্টোবর প্রতিমা নিরঞ্জন করা যাবে। পরে অবশ্য দশমীর দিন বিসর্জনের সময়সীমা বাড়িয়ে রাত দশটা পর্যন্ত করার কথা বলা হয়।

কিন্তু বিসর্জনে কোনও রকম নিয়ন্ত্রণের বিরোধী বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ দিনও অভিযোগ করেন, ‘‘বিভাজনের উদ্দেশ্যেই মুখ্যমন্ত্রী এই সব করছেন। হিন্দুদের বলছি, পরম্পরা মেনে প্রতিমা বিসর্জন দেবেন। নেতা-মন্ত্রীর কথা শুনবেন না। আর সমস্যা থাকলে মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে সেনা আনিয়ে নিন। সেনা পাহারায় বিসর্জন হোক।’’
রাজ্যের ঘোষণাকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে জনস্বার্থ মামলাও দায়ের হয়েছে। শুক্রবার তার শুনানিতে আবেদনকারী স্মরজিৎ চক্রবর্তী জানান, পঞ্জিকা মতে দশমীতে নিরঞ্জন করা যাবে রাত ১টা ২৬ মিনিট পর্যন্ত। তাঁর যুক্তি, কোনও একটি ধর্মীয় মিছিলের জন্য অন্য একটি ধর্মের আচার-অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা জারি হলে তা নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করে।

অস্ত্র নিয়ে মিছিল নয়, কড়া মুখ্যমন্ত্রী
রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত পাল্টা যুক্তি দেন, বিসর্জনের সময়সীমা সন্ধে ৬টার বদলে রাত ১০টা করা হয়েছে। এ ছাড়া, দশমীর দিন রাত ১২টার পরে অন্য একটি ধর্মীয় মিছিলের মহড়া শুরু হয়ে যাবে। ফলে নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি। বিচারপতি মাত্রে দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে এজি-কে নির্দেশ দেন, বিসর্জনের সময়সীমা আরও বাড়ানো যায় কি না, রাজ্য তা বিবেচনা করে কাল, সোমবার আদালতে জানাক।

এ দিনই রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে পাশে নিয়ে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক রকম জটিলতা হচ্ছে। বিজেপি অপপ্রচার চালাচ্ছে। সবার কাছে আবেদন, কুৎসায় কান দেবেন না, প্ররোচনা বা চক্রান্তে পা দেবেন না।’’

মমতার অভিযোগ, ‘‘বিসর্জনকে কেন্দ্র করে নোংরা রাজনীতি করছে বিজেপি। বজরঙ্গ, আরএসএস বা বিজেপি মার্কা কয়েকটা লোক যদি মনে করেন আমাদের শান্তি, সংস্কৃতিতে আঘাত হানবেন, তাঁদের বলে দিচ্ছি আগুন নিয়ে খেলবেন না।’’ বিজেপি-কে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘বাংলার মানুষ এ সব মেনে নেবে না। এখানে কোনও গেম প্ল্যান বা ব্রেন প্ল্যান কাজে লাগবে না।’’
মমতা আরও বলেন, কোথাও ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে মুম্বই পুলিশ দক্ষ, বাংলার পুলিশ দক্ষ নয়। বাংলায় যে ভাবে দুর্গাপুজো হয়, অন্য কোনও রাজ্যে এত ব্যাপক ভাবে হয় না। ঠিক যেমন মুম্বইতে গণেশ পুজো অনেক বেশি হয়, এখানে হয় না। তিনি প্রশ্ন তোলেন, মুম্বইয়ে গণেশ উৎসব ও মহরম এক দিনে হলে কী হবে?

মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, মুহাররম বা ঈদের সঙ্গে পুজো— এ রকম পরিস্থিতি তাঁর সরকারের আগে কাউকে সামলাতে হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘গত পাঁচ বছর ধরে রাজ্যের পুলিশ এ সব দক্ষতার সঙ্গে সামলাচ্ছে।’’
সুত্র : আনন্দবাজার/ এমটিনিউজ
captcha