IQNA

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর অবরোধ ও অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার আহ্বান

23:44 - September 18, 2017
সংবাদ: 2603865
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর অবরোধ ও অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এক বিবৃতিতে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ‘জাতিগত নিধন’ রুখতে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে মিয়ানমারের শাস্তি নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।


বার্তা সংস্থা ইকনা: এজন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের নেতৃত্বে নিরাপত্তা পরিষদে উন্মুক্ত আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে তারা। তবে নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা না করে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে দ্রুত মিয়ানমারের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও প্রস্তাব দিয়েছে তারা।

গত তিন সপ্তাহে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও পুলিশের হাতে প্রায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ১ হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান জেইদ রা’দ আল ঘটনাকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞের পাঠ্যপুস্তকীয় দৃষ্টান্ত’ আখ্যা দিয়েছেন।

মহাসচিব গুয়েতেরেজ প্রশ্ন রেখেছেন, এক তৃতীয়াংশ মানুষ দেশ থেকে উচ্ছেদ হলে তাকে জাতিগত নিধন ছাড়া আর কী নামে ডাকা যায়। এবার এইচআরডাব্লিউ তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব আনলো।

চলতি মাসের প্রথমে একটি স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশের মাধ্যমে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েঠিলো অন্তত ৭০০ বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তারা স্বাধীন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোকে কাজ করার সুযোগ দিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছিলো।

রবিবারের বিবৃতিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মিয়ানমারকে উপনিবেশিক ‘বার্মা’ হিসেবে পরিচিত করেছে। এতে বলা হয়েছে: রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ সহিংস ভূমিকার কারণে বিশ্বব্যপী নিন্দিত হচ্ছে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী। এবার দেশটির সেনাবাহিনীর ওপর এমন কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা দরকার যেন কোনওভাবেই সে দেশের জেনারেলরা তা উপেক্ষা করতে না পারে।

এইচআরডব্লিউ বলছে, 'জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিল এবং এই ইস্যুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর উচিত মিয়ানমারের ওপর কঠোর অবরোধ ও অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যেন তাদের জাতিগত নিধন সংক্রান্ত প্রচারণা ও কার্যক্রম বন্ধ করা যায়।'

এইচআরডব্লিউ তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে মিয়ানমারের শাস্তি নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে: ‘প্রথমত নিরাপত্তা পরিষদের একটি উন্মুক্ত আলোচনায় বসা উচিত। রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য মহাসচিব অ্যান্থনিও গুয়েতেরেসকেও আমন্ত্রণ জানানো উচিত আলোচনায়। যারা এরকম নৃশংস অপরাধ করেছে তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের মাধ্যমে শাস্তির বিষয় নিশ্চিত করা উচিত পরিষদের।’

ক্লিয়ারেন্স অপারেশন জোরদার হওয়ার পর থেকেই মিলতে থাকে বেসামরিক নিধনযজ্ঞের আলামত। পাহাড় বেয়ে ভেসে আসতে শুরু করে বিস্ফোরণ আর গুলির শব্দ। পুড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলো থেকে আগুনের ধোঁয়া এসে মিশতে শুরু করে মৌসুমী বাতাসে। মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে শূন্যে ছুড়ে দেয় সেনারা। কখনও কখনও কেটে ফেলা হয় তাদের গলা। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় মানুষকে। তবে এইসব তথ্য পেতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় সংবাদ সংগ্রাহকদের।

এইচআরডব্লিউ মনে করছে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করা উচিত নয়। মিয়ানমারে তাদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত এবং অপরাধী নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা উচিত। সামরিক সহায়তা বন্ধ করা অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি করা এবং মিয়ানমারের সেনা পরিচালিত ব্যবসাগুলোর আর্থিক লেনদেনও বন্ধ করা উচিত।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ নেতা জেনারেল মিন অং হ্লাইয়াংকে যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশালি ডেজিগনেটেড ন্যাশনালস (এসডিএন) তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা উচিত মার্কিন সরকারের। এই তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করতে পারেন না, মার্কিন কোনও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন করতে পারেন না এবং যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও এর সদস্য দেশগুলোরও এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত। বন্ধ করা উচিত সব ধরনের সামরিক সহায়তা। জাপান, নরওয়ে, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য সরকারেরও এমন ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

এইচআরডব্লিউ এর এশিয়া এডভোকেসি পরিচালক সিফটন বলেন, ‘মিয়ানমারে সামরিক কর্মকর্তারা যদি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ে তবেই তারা আন্তর্জাতিক সম্পদ্রায়ের আহ্বানে সাড়া দেবেন। ’

২৫ আগস্ট থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২২০টি গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়ার স্যাটেলাইট ছবি পরীক্ষা করেছে মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, সেনাসদস্যরা তাদের উপর গুলি ছুড়েছে এবং বাড়িতে আগুন দিয়েছে।

তবে মিয়ানমারের দাবি আরসা সেনাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে তারা। সিফটন মনে করেন, এআরএসএ’র সদস্যরা কেউ যদি এই নৃশংসতা চালায় তবে তাদেরও শাস্তির আওতায় আনা উচিত।

সাম্প্রতিক ক্লিয়ারেন্স অপারেশনের লক্ষ্যে সেনা অভিযান শুরুর কয়েকদিনের মাথায় ২৪টি পুলিশ চেকপোস্টে বিদ্রোহীদের সমন্বিত হামলায় অন্তত ১০৪ জন নিহত হওয়ার কথা জানিয়ে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান জোরদার করে সরকার।
তখন থেকে নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষেরা। এরইমধ্যে সেই সংখ্যা চার লাখ ছাড়ার তথ্য দিয়েছে জাতিসংঘ। বাংলা ট্রিবিউন। এমটিনিউজ
captcha