IQNA

‘ব্রেইনওয়াশের পর আমি আমার সঠিক পথ খুঁজে পেয়েছি’

13:56 - January 17, 2018
সংবাদ: 2604813
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জীবনে কোনো কিছু এমনিতে আসে না। এর জন্য অবশ্যই কোনো মাধ্যম থাকতে হবে।

 ‘ব্রেইনওয়াশের পর আমি আমার সঠিক পথ খুঁজে পেয়েছি’

বার্তা সংস্থা ইকনা: আমার গল্পটি একান্তই ব্যক্তিগত কিন্তু এটা এমন কিছু যা আমি সবার সঙ্গে শেয়ার করার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করছিলাম।

অনেক মানুষের মতো আমার সামনেও সঠিক পথ ছিল, কিন্তু আমি তা উপেক্ষা করি। আমি ছিলাম একগুঁয়ে প্রকৃতির।

আমার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা একটি খ্রিস্টান পরিবারে। কয়েক বছরের প্রচেষ্টা এবং ব্রেইনওয়াশের পর আমি আমার সঠিক পথ খুঁজে পেয়েছি।

অনেক আত্মাই আশা হারিয়েছে, বিশেষত ঈশ্বরের আশা। আমিও বিভিন্ন ধর্মের এই বাধা নিয়ে বড় হয়েছি কারণ আমি যে সব ধর্মের কথা শুনেছি তা মানুষের দ্বারা পুনরায় লেখা বা পরিবর্তিত হয়েছিল।

আমি ভাবলাম আমাকে নৈতিকতার মাধ্যমে আমার জীবন পরিচালিত করতে হবে। কিন্তু তার মধ্যে আমার নিজস্ব নিয়মও তৈরি করতাম। যাইহোক, আমি কখনোই ঈশ্বরের আশা হারাইনি।

ঈশ্বরের কাছাকাছি আসার জন্য কয়েক বছর আগে আমি এই বিশ্বাস নিয়ে প্রার্থনা করলাম যে, আমার শরীরের প্রতিটি ইঞ্চিতে ঈশ্বর তার কাছাকাছি আসার উপায় দেখাবেন এবং তিনি তা দেখিয়েছেন। কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি। আমি অজ্ঞ ছিলাম। ২০১৪ এর আগে আমি তা আসলেই বুঝতে পারিনি।

আমাদের জন্য ইসলাম ছিল কিছুটা বিদেশি ধর্ম। আমি এই বিশ্বাস নিয়ে বড় হয়েছি যে, ইসলাম একটি খারাপ এবং ঘৃণ্য ধর্ম; যা নারীদেরকে দমন করে। আমি বুঝতে পারতাম না বা মনে প্রশ্ন ছিল- কেন নারীরা তাদের মাথার ওপরে হিজাব পরতে পছন্দ করবে।

মুসলিমদের সম্পর্কে মিডিয়ার খবরে প্রায় বলা হতো, মুসলিম শব্দটির সঙ্গে সন্ত্রাসী শব্দটি জড়িয়ে আছে এবং আমাদের ঈশ্বর থেকে আল্লাহ্ আলাদা উপাস্য।

যাইহোক, প্রতিটা সময় আমার হৃদয় শান্তি এবং তার সত্যের খোঁজ করেছে। আমি যা বিশ্বাস করি ইসলামে তার অনেক কিছুতে সাদৃশ্য দেখতে পাই এবং এক সময় আমার মস্তিষ্ক উপলব্ধি করতে পারে, হ্যাঁ এটাই সত্য, এটিই সঠিক পথ।

আমি আমার পরিবার, আমার সব বন্ধু এবং যারা আমাকে জানত তারা আমাকে কি বলবে তা নিয়ে অত্যন্ত ভীত ছিলাম।

যতই সময় যাচ্ছিল, আমার সন্দেহও ধীরে ধীরে দূর হতে থাকে। আমি উপলব্ধি করতে পারি যে, মুসলিমরা আসলেই শান্তিপূর্ণ মানুষ এবং তারা এক ঈশ্বরকে উপাসনা করেন। সারা বিশ্বে প্রায় ১.৬ বিলিয়ন মুসলিম রয়েছে এবং তাদের অধিকাংশই অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ। কোনো কিছুতে বিশ্বাস করানোর জন্য এই মানুষগুলোকে জোর করা হয়নি। তারা কেবলই সত্য খুঁজে পেয়েছে।

আমি আমার খারাপ অভ্যাসগুলোকে ধীরে ধীরে ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করি। আমি জানতে চাইলাম যে, আমি যদি এতে সফল হতে পারি, তবে আমি আমার প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্ত নিলে তাতে ব্যর্থ হব না।

আমি এমন পয়েন্টে ছিলাম, যেখান থেকে আমি বাম বা ডানদিকে যেতে পারতাম এবং কখনো কখনো আমি কিছুটা বামে ঝুঁকতাম কিন্তু সামান্য পরেই আবার আগের জায়গায় ফিরে আসতাম কারণ আমার নিজের ভিতর এক অস্বস্তিকর অবস্থা অনুভূত হয়েছিল।

আমি একটি পয়েন্টে আসলাম এবং চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে আমি আমার নিজেকে চাপ দিলাম।

সব দ্বিধা-দ্বন্দ্বকে পেছনে ফেলে ২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর স্থানীয় একটি মসজিদে গিয়ে আমি আমার শাহাদা ঘোষণা করি। সেই মুহুর্তে আমার কাছে কেবল মনে হয়েছে যে, বছরের পর বছর ধরে বহন করা বিশাল বোঝাটা আজকে মাথা থেকে নামল।

সেই রাতে আমি অনেক কান্না করেছিলাম। আসলে আমি টানা দু’দিন ধরে কান্না করেছি। আমার এক বন্ধু আমাকে সাহস যুগিয়েছিল এবং তার সাহস আমাকে পুনর্জন্ম দিয়েছিল। তখন আমি ছিলাম একটি শিশুর মতো এবং শিশুদের মতো অনেক কান্না করেছি। আমাকে শিশুদের মতো করে পদক্ষেপ নিতে হয়েছিল।

সেই সপ্তাহ থেকে আমি প্রার্থনা করার চেষ্টা করেছিলাম। আমি আগে অনেকবার এটি করার চেষ্টা করেছি কিন্তু ঠিকমত পারিনি, কিন্তু আমার শাহাদা ঘোষণার সব কিছুই সত্যিই অনেক সহজ হয়ে যায়।

আপনি যদি আল্লাহর দিকে এক কদম পা ফেলেন, তবে তিনি আপনার দিকে দৌড়ে আসবেন।

আল্লাহ আমাকে ইসলামের দিকে পরিচালিত করার জন্য তার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং এজন্য নিজেকে অত্যন্ত ভাগ্যবান মনে করছি। অ্যাবাউট ইসলাম অবলম্বনে

captcha