IQNA

‘হিজাব আমার ওয়ারড্রব থেকে শুরু করে জীবনের সবকিছুই পরিবর্তন করে দিয়েছে’

20:42 - January 13, 2019
সংবাদ: 2607732
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: তেরো বছর বয়সে আমি আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলাম। আমি আমার মায়ের পুরনো কিছু স্কার্ফ এবং সেফটি পিনের সাহায্যে হিজাব পরিধান করি এবং এভাবেই আমি বাহিরে যাই।

‘হিজাব আমার ওয়ারড্রব থেকে শুরু করে জীবনের সবকিছুই পরিবর্তন করে দিয়েছে’বার্তা সংস্থা ইকনা: এর পূর্বে হিজাব সম্পর্কে আমি কিছু বাস্তবিক এবং কিছু বিদেশি গল্প শুনেছিলাম, আর হিজাব পরিধান করাটা কত বড় দায়িত্বের সে সম্পর্কে জেনেছিলাম। একই সাথে হিজাব পরিধান থেকে বিরত থাকার জন্য সকল ধরনের নেতিবাচক বিষয় জেনেছিলাম।

অথচ, আমি সে দিন হিজাব পরিধান করার জন্য সাহসী হয়ে উঠি। অন্যেরা হিজাব সম্পর্কে কি বলেছে তাকে আমি দূরে সরিয়ে রাখি এবং হিজাবের সাথে আমার নিজের সম্পর্ক গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিই।

বিশ্বাসের অন্যান্য দিকের মতই হিজাব পরিধান করা একটি ভ্রমণের মতই এবং সৃষ্টিকর্তার আরো কাছাকাছি হওয়ার জন্য এটি একটি পথনির্দেশক।

হিজাব পরিধান করার প্রথম কয়েক বছর আমি অনেকটা এরকম অনুভব করেছিলাম যে, আমি যেন সৃষ্টিকর্তার কাছে পৌঁছানোর একটি পথে রয়েছি। আমার ছোট বয়সে আমি হিজাব পরিধান করাতে কোনো বাধার সম্মুখীন হই নি, কারণ আমি এর সাথে বড় হওয়ার স্বাধীনতা ভোগ করেছিলাম।

আমি শিখেছি, অন্বেষণ করেছি, পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছি এবং প্রতিফলিত হয়েছি। শালীনতা সম্পর্কে আমার নিজস্ব ধারণা এবং হিজাবের সাথে আমার সম্পর্ক আমার জীবনের সবকিছুতে প্রতিফলিত হয়েছে। এটি আমার কাপড় রাখার ওয়ারড্রব থেকে শুরু করে লোকজনের সাথে আচরণ সবকিছু পরিবর্তন করে দিয়েছে।

হিজাব ধীরে ধীরে একটি ভ্রমণের ধারণা থেকে বেরিয়ে আসে এবং এটি আপনার চূড়ান্ত গন্তব্যের ধারণার সাথে মিলে যায়: হতে পারে আপনি একেবারে ‘বিশুদ্ধ’ ভাবে হিজাব পরিধান করেন অথবা আপনি কোনো দিনই হিজাব পরিধান করেন না।

আমি যখন আমার বন্ধুদের সাথে আলোচনা শুরু করেছি, পরামর্শ দাতাদের পরামর্শ নিতে শুরু করেছি এমনকি শালীনতা সম্পর্কে প্রভাবশালীদের মন্তব্য পড়া শুরু করেছি তখন আমি জানতে পরেছি যে, হিজাব সম্পর্কে আমার কল্পনা শুধুমাত্র অলীক কোনো বিষয় নয়।

হিজাবকে কোনো দ্বৈত বস্তু হিসেবে দেখাতে অনেক ভয়ঙ্কর বিষয় জড়িত রয়েছে, এর মাধ্যমে এটি বিশ্বাসের সব কিছু অথবা কিছুই না এরকম বস্তুতে পরিণত হতে পারে। সকলেরই ভালো কিছু করার জন্য প্রচেষ্টা রয়েছে কিন্তু এমনভাবে নয় যাতে তারা পুরোপুরি নিখুঁত হতে পারে।

নারীদের হিজাব পরিধান করতে উৎসাহ দেয়ার বদলে বরং এর উল্টোটাই পরামর্শ দেয়া হয়। বিশ্বাসে অবিচল ভাবে নিখুঁত থাকার জন্য প্রচেষ্টা চালানোর বদলে নিজের সবচেয়ে সেরাটা দেয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালানো হলে যে কেউ হতাশায় ভুগতে বাধ্য।

হিজাব পরিধানকারী সকলেরই উচ্চগামী বা নিম্নগামী অভিজ্ঞতা রয়েছে যা তাদের বিশ্বাসের সাথে সম্পৃক্ত অথবা বিশ্বাসের চর্চার সাথে সম্পৃক্ত। বিশ্বাসের এমন কিছু দিক রয়েছে যা নিয়ে সকলেরই সংগ্রাম করতে হয়। যদি তা হয় হিজাব নিয়ে তবে এমন কেউ যিনি কিনা তার হিজাব নিয়ে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তখন কেউ যদি তাকে পুরোপুরি ভাবে তা ত্যাগ করতে বলেন তখন কেমন হবে?

শত শত বছর পূর্বে নবী মুহাম্মদ(সাঃ) আমাদেরকে বিশ্বাসের ক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত কিছু থেকে বেঁচে থাকার জন্য হুঁশিয়ার করে গিয়েছেন:

‘ধর্ম(ইসলাম) একটি সহজ বিষয়, এবং যে কেউ ধর্মকে কঠিন করবে তা তার জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। সুতরাং, (প্রার্থনার ক্ষেত্র) মধ্যপন্থা অবলম্বন কর, যদি তুমি তা করতে না পার তবে এর কাছাকাছি কিছু কর এবং সুসংবাদ দাও আর প্রত্যেহ সকালে, সন্ধ্যায় এবং রাতের কিছু অংশে আল্লাহর সাহায্য চাও।’- সহীহ আল-বুখারী।

হিজাব পরিধান করা অথবা ইসলামের অন্য যে কোনো বিষয়ের চর্চা করা যেন কঠিন না হয়ে যায়। তথাপি যখন আমরা সামাজিক চাপের দৃষ্টিতে এটিকে দেখবো তখন আমরা তাতে একটি কঠিন সীমানা এঁটে দিব।

হিজাব পরিধান করার পরে আমি সবচেয়ে বেশি যা নিয়ে সংগ্রাম করেছি তা হল- লোকজনকে এটি পরিধান করার কারণ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে বিরত থাকাতে এবং এটা নিশ্চিত করতে যে, আমি শুধুমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালাকেই উত্তর দিতে পারি।

সাধারণত হিজাবকে শুধুমাত্র মাথা ঢেকে রাখে এমন পোশাক হিসেবে ভাবা হয়ে থাকে। এর সাথে শারীরিক উপস্থিতি যোগ হয় এবং একই সাথে আপনার সম্পর্কে লোকজন কি ভাবছে তাও আপনার মনে আসে।

এ ধরণের চিন্তা আসা একেবারেই দুর্ভাগ্যজনক, কারণ এটি সবসময় এরকম নাও হতে পারে যে, হিজাব একটি পুরো আচরণের অংশ। এটি শুধুমাত্র পোশাকের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় বরং আপনি কিভাবে কথা বলেন, কিভাবে নম্রতা দেখান, কিভাবে গ্রহণ করেন, কিভাবে ব্যয় করেন এবং অন্যদেরকে আপনি কিভাবে নেন তার সাথে সংশ্লিষ্ট।

হতে পারে আপনি শুধুমাত্র মাথায় হিজাব পরিধান করেছেন কিন্তু আপনার জিহ্বায়, হৃদয়ে এবং শরীরের অন্যান্য অংশে এর অনুপস্থিতি থাকতে পারে।

শেষ পর্যন্ত পুরুষ এবং নারীগণের উচিত প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সত্যিকার অর্থে নিজেদের হৃদয়ে হিজাবের অনুসরণ করা, যাতে করে আমাদের হৃদয় হয়ে উঠে বিনীত, শালীন এবং প্রফুল্ল।

একবার যখন আপনি আপনার হৃদয়ে হিজাবকে নিয়ে যাবেন তখন এটি আপনার জীবনের সকল ক্ষেত্রেই প্রতিফলিত হবে, বিশেষত হিজাব নিয়ে অন্যদের প্রচেষ্টায় আপনি কতটা একাত্মতা ঘোষণা করছেন সে দিকে আপনাকে তা নিয়ে যাবে।

দশ বছর পরে হিজাব এবং শালীনতা সম্পর্কে আমার নিজের ধারণা একটি দীর্ঘ পথ ভ্রমণ করেছে এবং তা এখনো দ্বার খোলার অপেক্ষায় রয়েছে। কিছু না, কিন্তু এটি আমার বিশ্বাসের ভিত্তি তৈরি করেছে এবং হিজাব সম্পর্কে আমার দৃষ্টিকে আরো শক্তিশালী করেছে যা একান্তই আমার নিজের।

হিজাব মাথায় থাকুক আর নাই থাকুক, ভেতরে থাকুক আর বাহিরে থাকুক তা আমার জন্য একটি ঐচ্ছিক বিষয়, কারণ হিজাব সবসময় আমার নিজের একটা অংশ হয়ে গিয়েছে। আমি আশা করি সকল হিজাবী নারী, পাগড়ি পরিধান কারী, পার্ট-টাইম হিজাবী, হিজাব পরিধান করেন না এমন এবং সকলেই হিজাব সম্পর্কে তারা যে নিয়ম পালন করেন তা তাদের একান্তই নিজের ব্যাপার হয়ে থাকবে।

সূত্রঃ মাইসালাম ডট কমে প্রকাশি নীনা বীচাহামের কলাম থেকে।

captcha