IQNA

ফিজিতে যেভাবে ইসলাম আসে

12:49 - September 16, 2022
সংবাদ: 3472473
তেহরান (ইকনা): দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বপ্রান্তে ক্ষুদ্র একটি দেশের নাম ফিজি। ইন্টারন্যাশনাল ডেটলাইনে অবস্থিত পৃথিবীর একমাত্র আবাদি অঞ্চল এটি। এ ডেটলাইনের পাশেই রয়েছে একটি মনোরম মসজিদ। এখান থেকেই প্রতিদিন পৃথিবীর সর্বপ্রথম আজান শোনা যায়।
এখানেই প্রতিদিন সবার আগে সূর্য ওঠে। তিন শর বেশি ছোট-বড় দ্বীপ নিয়ে গড়ে উঠেছে এই নজরকাড়া দেশ। তার বেশির ভাগ দ্বীপই এখনো অনাবাদি এবং আয়তনেও খুবই ক্ষুদ্র। দুটি দ্বীপ বেশ বড়। ফিজির বেশির ভাগ শহর এ দুটি দ্বীপে অবস্থিত। সবচেয়ে বড় দ্বীপটির নাম হলো ভিতি
 
(Viti)| রাজধানী সুভা  (Suva) এখানেই অবিস্থত। দ্বিতীয় দ্বীপ ভেনিয়া (Vania) । প্রাগৈতিহাসিককাল থেকে যারা এই ফিজির দ্বীপগুলোতে বসবাস করছে, তাদের ‘কাভেতি’ বলা হয়। প্রচলিত আছে, তারা আফ্রিকার টাঙানেকা থেকে এসে এখানে বসতি গড়েছিল। টাঙানেকাই বর্তমান কেনিয়া। কোনো কোনো ইতিহাসবিদের মতে, তারা মূলত ইন্দোনেশিয়া থেকে আগত। তবে তাদের অবয়বে আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার ছাপ দীপ্যমান।
 
আয়তন : ১৮২৭৪ বর্গ মাইল।
 
ভাষা : ইংরেজি, ফিজিয়ান ও হিন্দি।
 
জনসংখ্যা : ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ৯ লাখ ৪৩ হাজার ৭৩৭ জন।
 
ধর্ম : ২০০৭ সালের জরিপ অনুযায়ী প্রোটেস্ট্যান্ট ৪৫ শতাংশ, হিন্দু ২৭.৯ শতাংশ, রোমান ক্যাথলিক ৯.১ শতাংশ, মুসলিম ৬.৩ শতাংশ ও শিখ ০.৩ শতাংশ।
 
ইংরেজদের শাসন : এখানে ইংরেজদের আগমন ঘটে অষ্টাদশ শতাব্দীতে। তারা এ অঞ্চলকে নিজেদের কলোনি বানিয়ে নেয়। এখানকার জনসংখ্যার ৪৭.৬ শতাংশ ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তাদের মধ্যে হিন্দুর সংখ্যাই বেশি ছিল।
 
মুসলমানদের আগমন ও অবস্থা : এই অঞ্চলে ইসলাম আসে ভারতীয়দের মাধ্যমে, সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজরা যখন এই অঞ্চলে তাদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে, তখন লক্ষ করে যে এখানকার আদিবাসীরা চাষাবাদে একেবারে অজ্ঞ-অনভিজ্ঞ। ইংরেজ গভর্নর তখন চিন্তা করল, ভারতীয় অভিজ্ঞ চাষিদের এখানে নিয়ে এলে ভালো হবে। ভারতও তখন তাদের সাম্রাজ্যবাদী কলোনি। সেই সূত্রেই এই অঞ্চলে বহু ভারতীয়কে নিয়ে আসা হয়। তাদের একাংশের মাধ্যমেই এ অঞ্চলে ইসলামের প্রচার ঘটে। সর্বপ্রথম ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের যাঁরা এখানে এসেছিলেন, তাঁরা নামাজ, রোজা প্রভৃতি ধর্মীয় মৌলিক বিষয় মেনে চলতেন। তাঁরা ইসলামের প্রতীকী বিষয়গুলোর প্রতি যত্নবান ছিলেন। তারাই এখানে প্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন। কিন্তু যেহেতু নতুন প্রজন্মের ধর্মীয় শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থা ছিল না; তা ছাড়া হিন্দু, খ্রিস্টান ও শিখদের সঙ্গে ছিল সার্বক্ষণিক মেলামেশা। ফলে ধীরে ধীরে দ্বীনের অনুসরণ ও ধর্মীয় আমল-আচরণ ম্লান ও প্রাণহীন হয়ে পড়ে। অবশেষে দ্বীনি দাওয়াতের উসিলায় আল্লাহ তাআলা এখানে দ্বীনের আলো পুনরুজ্জীবিত করেন। সর্বপ্রথম সম্ভবত ১৯৬৭ সালে জাম্বিয়া থেকে তাবলিগ জামাতের আগমন হয়। তারাই ধর্মের প্রতি ফিরে আসার প্রেরণা জাগিয়ে তোলে। এখানকার অধিবাসীরাও তাদের ধর্মীয় কর্তব্যের কথা জানতে পারে। নতুন নতুন মসজিদ নির্মাণ শুরু হয়। সেখানে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্যে মক্তব প্রতিষ্ঠিত হয়। আলহামদুলিল্লাহ, এখন দেশজুড়ে ধর্মীয় তত্পরতা সযত্নে চলমান।
 
মাদরাসা স্থাপন : এখানকার মানুষের মধ্যে দিন দিন ধর্মীয় অনুভূতি বিকাশের ফলে এখানে বেড়েছে মসজিদ-মক্তবের সংখ্যা। কিন্তু মুসলিমদের ধর্মীয় উচ্চ শিক্ষার কোনো ব্যবস্থা এখানে ছিল না। আলহামদুলিল্লাহ, বাংলাদেশের একজন আলোকিত মানুষ মাওলানা আবদুল গোফরানের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা এখানে একটি দাওরায়ে হাদিস মাদরাসার সূচনা করেছেন, যাতে বাংলাদেশের মাওলানা জাফর আলম ও মাওলানা কামরুজ্জামান সাহেবও রয়েছেন। বর্তমানে ফিজিতে অভিজ্ঞ আলেম তৈরি হচ্ছে। এগিয়ে যাচ্ছে ফিজির মুসলিমরা। আল্লাহ তাদের এ প্রয়াসকে কবুল করুন।
captcha