IQNA

কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন ব্যক্তিদের চরিত্র – ২৭

ফেরাউন; মিথ্যা খোদা, যার মৃত্যু পানিতে ডুবে হয়েছিল

0:01 - January 31, 2023
সংবাদ: 3473258
তেহরান (ইকনা): ফেরাউন প্রাচীন মিশরের রাজাদের একটি ডাকনাম ছিল। মিশরিয় এসকল রাজাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ফেরাউন ছিল হযরত মূসা (আঃ) এর সময়ে। তিনি নিজেকে খোদা বলে দাবি করত। এই ফেরাউন মহান আল্লাহর ইচ্ছায় সমুদ্রের মাঝখানে ডুবেছিল, কিন্তু তার দেহ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এখনও অক্ষত রয়েছে।

ফেরাউন শব্দটি প্রাচীন মিশরের শাসকদের একটি ডাকনাম। ফেরাউন ছিল প্রধান প্রশাসক, সেনাবাহিনীর প্রধান এবং মিশরের সাধারণ শাসক। ফেরাউন শব্দটি কুরআনে ৭৪ বার উল্লেখ করা হয়েছে, যার সবকটিই হযরত মূসা (আ.)এর সময়ের ফেরাউনকে নির্দেশ করে।
পবিত্র কুরআনে মিশরে মুসার সময়ের শাসককে ফেরাউন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে; অনেক ইসলামী ইতিহাসবিদ বিশ্বাস করেন যে "দ্বিতীয় রামসেস" (১২২৪-১২৯০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) ছিল হযরত মুসার (আ.) যুগের ফেরাউন। কেউ কেউ মেফনেতাহকে (১২১৪-১২২৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) হযরত মুসার (আ.) সময়ের ফেরাউন হিসাবে বিবেচনা করেছেন।
কুরআন ফেরাউনকে একজন অত্যাচারী রাজা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়, যে নিজেকে মিশরীয় জনগণের প্রভু বলে মনে করত। ফেরাউন বানী ইসরাইলের লোকদের তালিকাভুক্ত করেছিল, যারা হযরত ইউসুফের (আ.) নবুওয়তের সময় মিসরে বসতি স্থাপন করেছিল এবং যখন ভবিষ্যদ্বক্তাগণ বলেছিলেন যে, বানী ইসরাইলের গোত্র থেকে একটি পুত্র জন্মগ্রহণ করবে যে ফেরাউনকে ধ্বংস করবে, তখন সে বানী ইসরাইলের পুত্রদের হত্যা করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু ঘটনাক্রমে হযরত মুসা (আ.)কে শৈশবেই ফেরাউন তার ঘরে নিয়ে যায় এবং সেখানেই হযরত মুসা (আ.) বড় হয়।
ফেরাউন ধার্মিক ব্যক্তি ছিল না এবং বিভিন্ন উপায়ে তার বিরুদ্ধে থাকা লোকদেরকে কারারুদ্ধ বা নির্যাতন করত; যারা তার বিরোধিতা করতো তাদেরকে পাশবিক শাস্তি দিয়ে মারতো। বিশেষ করে মাটিতে পেরেক পুতে তার প্রতিপক্ষদের উপর থেকে সেই পেরেকে নিক্ষেপ করতো।
হযরত মূসা (আ.) যখন একজন নবীর পদে পৌঁছালেন, তখন তাকে ফেরাউনকে মহান আল্লাহর ইবাদত করার জন্য আমন্ত্রণ জানানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। মূসার কথা শোনার পর এমনকি তার অলৌকিক কাজগুলো দেখে ফেরাউন মূসাকে মিথ্যাবাদী ও যাদুকর বলে অভিহিত করে এবং তাকে মিশরের বিশিষ্ট যাদুকরদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে বলে।
মিসরের জাদুকর ও হযরত মূসার (আ.) মধ্যে প্রতিযোগিতা সেদেশের তৎকালীন ঈদের দিন অনুষ্ঠিত হয়েছিল; হযরত মুসার (আ.) অলৌকিক ঘটনা দেখে যাদুকররা মেনে নিল যে হযরত মুসার (আ.) যা করছে তা জাদু নয়। কিন্তু ফেরাউন মেনে নেয়নি এবং তখন মিশরীয় যাদুকরদের নির্যাতন করার নির্দেশ দেয়।
ফেরাউন ও তার সৈন্যরা হযরত মুসার (আ.)কে ধাওয়া করছিল, এমন সময় হযরত মুসার (আ.) মুমিনদের সাথে রাতে মিসর ত্যাগ করেন। যখন তারা সমুদ্রের কাছে পৌঁছল, মূসা (আ.) একটি লাঠি দিয়ে সাগরে আঘাত করলেন এবং তাঁর ও তাঁর সম্প্রদায়ের জন্য পানি বিভক্ত হয়ে গেল। সেই পথ দিয়ে তারা সেই পথ অতিক্রম করলেন; কিন্তু ফেরাউন যখন অতিক্রম করছিল, তখন দুই দিকের পানি একত্রিত হয়ে যায় এবং তারা সেখানে ডুবে যায়।
পবিত্র কুরআনে উল্লেখ আছে যে ফেরাউন ডুবে যাওয়ার সময় মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল, কিন্তু তার ঈমান আনা সেই মুহূর্তে গৃহীত হয়নি, বরং তার মৃতদেহ অবশিষ্ট থাকার খবরটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শিক্ষা হিসেবে দেওয়া হয়েছে।

captcha