IQNA

পশ্চিমারা বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন প্রকৃত গণতন্ত্রের প্রবক্তা ও রক্ষক নয় বরং ভক্ষক !!!

11:01 - February 03, 2023
সংবাদ: 3473280
তেহরান (ইকনা): অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে যেবার ক্ষমতাচ্যুত করেছিল সিআইএ ও এমআইসিক্স! (Roar বাংলা) এটা আসলে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনীর ক্যু ( coup ) ছাড়া আর কিছু কি? অথচ প্রবন্ধের শিরোনাম দেওয়া উচিত ছিল ঠিক এ ভাবে : " গোয়েন্দা - নিরাপত্তা ক্যূ করে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে যেবার ক্ষমতাচ্যুত করেছিল সিআইএ ও এম আই সিক্স ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন) " !! 
আর এ দুই নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনী ও সংস্থার সাথে সহযোগিতা করেছিল অস্ট্রেলীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনী ও সংস্থাগুলো এবং অস্ট্রেলিয়ার গভর্ণর জেনারেল তো ছিল ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ কর্তৃক নিযুক্ত এবং এম আই সিক্স ও সিআইএর সাথে একান্ত সংশ্লিষ্ট এবং তাদের বেতনভুক ও আশ্রিত ! আর এ কারণেই সে ( অস্ট্রেলিয়ার গভর্ণর জেনারেল) এই নিরাপত্তা গোয়েন্দা ক্যুর চূড়ান্ত পর্যায় বাস্তবায়ন করে দু' বার গণ নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী গগ হুইটল্যামকে সরাসরি বরখাস্ত করে । ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধে জন পিলগার এটাকে ইঙ্গো মার্কিন ক্যু বলে  অভিহিত করেছেন : 
 
The British-American coup that ended Australian independence | John Pilger | The Guardian
https://www.theguardian.com/commentisfree/2014/oct/23/gough-whitlam-1975-coup-ended-australian-independence
ব্রিটিশ - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে ক্যু অস্ট্রেলিয়ার স্বাধীনতার ইতি টানে ও যবনিকাপাত ঘটায় । ১৯৭৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার সদ্য নির্বাচিত প্রধান মন্ত্রী গগ  হুইটল্যাম ইঙ্গো - মার্কিন স্বার্থ পরিপন্থী স্বতন্ত্র স্বাধীন জাতীয় আভ্যন্তরীন ও বৈদেশিক নীতি ও পদক্ষেপ সমূহ গ্রহণের অপরাধে ১৯৭৫ সালে ক্যুদেতায় ক্ষমতা হারান !!! এই ক্যু ঘটানোর জন্য ১৯৬৫ সালে ইন্দোনেশিয়ায় সুকর্ন সরকারকে ক্যুদেতার মাধ্যমে পতন ঘটিয়েছিল যে মার্কিন কূটনীতিক দ্য ক্যুমাস্টার বলে কুখ্যাত মার্শাল গ্রিন সে অস্ট্রেলিয়ায় রাষ্ট্রদূত হয়ে আসে । 
 
স্মর্তব্য যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭৩ সালে রক্তাক্ত সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে চিলির নির্বাচিত বামপন্থী আলেন্দো সরকারের এবং ১৯৭৫ সালে আরেক রক্তক্ষয়ী সামরিক অভ্যুত্থান ও ক্যুদেতা ঘটিয়ে বাংলাদেশের শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের পতন ঘটায়। এর আগে ইরানে বিংশ শতাব্দীর ৫০ এর দশকে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে জনগণের নির্বাচিত ড: মোসাদ্দেক সরকারের পতন এবং পাকিস্তানেও ঐ একই দশকে জেনারেল ইস্কান্দার মীর্জা ও জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক ক্যুদেতার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারের পতন ঘটিয়ে দীর্ঘ স্বৈরাচারী সামরিক শাসনের সূচনা করেছিল । তাহলে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে আসলে পশ্চিমারা যে গণতন্ত্রের দাবি করে তা আসলে মাকাল ফল , বিপুল পরিমাণ জা‌তীয় সম্পদ , অর্থ ও টাকা - পয়সার শ্রাদ্ধ এবং জনগণকে নির্বাচন ও ভোট ভোট খেলা ও উন্মাদনায় মাতিয়ে রাখা ছাড়া আর কিছুই নয় । 
 
এমনকি অবাধ নিরপেক্ষ কারচুপি মুক্ত নির্বাচনে নিজেদের পছন্দের কাঙ্খিত ব্যক্তি ও দল নির্বাচিত না হলে পশ্চিমা শক্তি গুলো বলতে থাকে যে জনগণ ভুল ব্যক্তি ও দলকে নির্বাচিত করেছে যার বা যাদের ক্ষমতায় থাকা অনুচিত । তাই জনগণের নির্বাচিত ভুল ব্যক্তিদের ক্ষমতাচ্যুত ও অপসারণের জন্য পশ্চিমারা ক্যুর মতো ভুল ও অন্যায় পন্থা ও পদ্ধতি বেছে নিতে মোটেও দ্বিধাবোধ করে না ও কুণ্ঠিত হয় না । ইরানের ড : মোসাদ্দেক ,  ইন্দোনেশিয়ার সুকর্ন , চিলির আলেন্দো , বাংলাদেশের শেখ মুজিবুর রহমান, পাকিস্তানের জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং অস্ট্রেলিয়ার গগ হুইটল্যাম ছিলেন জনগণের নির্বাচিত ভুল ব্যক্তি যারা পশ্চিমা শক্তিগুলোর দৃষ্টিতে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ বিরোধী হওয়ার জঘন্য অপরাধে ক্ষমতা থেকে ক্যুর মাধ্যমে অপসারণের যোগ্য  এমনকি হত্যারও যোগ্য। তাই আমরা দেখতে পাই যে চিলির আলেন্দো, বাংলাদেশের শেখ মুজিবুর রহমান এবং পাকিস্তানের জুলফিকার আলী ভুট্টোকে পশ্চিমা সমর্থিত ক্যুদেতাকারী সামরিক জান্তার হাতে প্রাণ হারাতে হয়েছে !! 
 
অতএব পশ্চিমা শক্তিবর্গ আসলে গণতন্ত্রের যে প্রবক্তা নয় বরং গণতন্ত্রের ভক্ষক বটে তা উপরিউক্ত পশ্চিমা দেশ সমূহের পরিচালিত ক্যুদেতা সমূহ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় এবং অস্ট্রেলিয়ায় ইঙ্গো - মার্কিন  নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনী ও সংস্থা সমূহের পরিচালিত ক্যুর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী গগ হুইটল্যামের অপসারণ এ সত্যকে আরো নগ্ন ভাবেই প্রতিষ্ঠিত করেছে। আর সেই সাথে প্রমানিত হল যে গণতন্ত্রের চাইতে পশ্চিমাদের কাছে তাদের ভোগবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ সংরক্ষণ হচ্ছে প্রাধান্য প্রাপ্ত মুখ্য বিষয়। ঘৃণ্য জঘন্য সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থের সুরক্ষা ও ভোগবাদিতার জন্য পাশ্চাত্য বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , ব্রিটেন , ফ্রান্স ইত্যাদি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্রের পতন ঘটিয়ে স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে এবং করে থাকে । তাদের কাছে গণতন্ত্র হচ্ছে ফালতু ও মূল্যহীন । তাদের ( পশ্চিমাদের) কাছে একমাত্র স্বার্থই হচ্ছে প্রকৃত সত্য যার ওপর কোনো সত্য নেই !!!! অতএব পশ্চিমারা গণতন্ত্রী হওয়ার চাইতে সবচেয়ে বেশি স্বার্থপর ও ভোগ বাদী । স্বার্থ ও ভোগ ছাড়া তারা আর কিছুই বোঝে না । আর এ কারণেই তারা গণতন্ত্রের প্রহরী হওয়ার মিথ্যা দাবি তুলে সুযোগমতো গণতন্ত্রেরই ভক্ষক বনে যায় ।
 
তাই পাশ্চাত্যের কাছে গণতন্ত্র মানে শিয়ালের কাছে মুরগী বর্গা দেওয়ার মতোই । গণতন্ত্র যে পর্যন্ত তাদের স্বার্থ ও ভোগের নিশ্চয়তা দিতে পারবে সে পর্যন্ত গণতন্ত্র ঠিক আছে এবং তারাও থাকে গণতন্ত্রী ; আবার ঠিক যখন গণতন্ত্রের মাধ্যমে তাদের স্বার্থ ও ভোগ সম্ভব হয় না ব্যস তখন তারা গণতন্ত্রকে ছুঁড়ে ফেলে গণতন্ত্রের পতন ঘটায় ও চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে ঠিক তেমনি যেমনটা ১৯৭৫ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ১৯৭৪ সালে জন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী গগ হুইটলাইমের ভাগ্যে ঘটেছিল । যেহেতু তিনি ইঙ্গো - মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থের জন্য হুমকি হয়ে যাচ্ছিলেন সেহেতু তাকে বরখাস্ত ও অপসারণ জরুরী হয়ে গিয়েছিল। আর অস্ট্রেলীয় জনগণ তার মতো ভুল ব্যক্তিকে নির্বাচন করেছে এ অজুহাত দেখিয়ে ইঙ্গো মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রতিভু সিআইএ ও এমআইসিক্স গভর্ণর জেনারেলের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার ক্ষমতার রঙ্গমঞ্চ থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয় প্রধানমন্ত্রী গগ হুইটলাইমকে  এবং তখন অস্ট্রেলিয়ার গণতন্ত্র , জনগণের নির্বাচন , ভোট ও রায়ের প্রতি আর বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা দেখায় নি ইঙ্গো মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ । যখন সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ  গণতন্ত্রের কাছে বিপন্ন তখন গণতন্ত্রকেই ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে । এই হলো পশ্চিমাদের যুক্তি !!!
 
এক কথায় গণতন্ত্র হচ্ছে পশ্চিমাদের স্বার্থ ও ভোগের সোপান স্বরূপ । আর এই একই কথা অপরাপর নীতি নৈতিকতা ও আদর্শ  যেমন: মানবাধিকার, বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা ইত্যাদির ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য।
 
মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
captcha