IQNA

১৩ রজব পিতা দিবস

1:47 - February 06, 2023
সংবাদ: 3473290
তেহরান (ইকনা): ১৩ রজব হযরত আমীরুল মু'মিনীন ইমাম আলী ইবনে আবী তালিবের ( আ ) শুভ জন্মদিনকে পিতা দিবসও বলা হয়। কারণ মহানবী (সা) নিজেকে এবং হযরত আলীকে মুসলিম উম্মাহর পিতা বলে অভিহিত করেছেন।
১৩ রজব হযরত আমীরুল মু'মিনীন ইমাম আলী ইবনে আবী তালিবের ( আ ) শুভ জন্মদিনকে পিতা দিবসও বলা হয়। কারণ মহানবী (সা) নিজেকে এবং হযরত আলীকে মুসলিম উম্মাহর পিতা বলে অভিহিত করেছেন। আমরা নীচে এতদসংক্রান্ত কয়েকটি রিওয়ায়ত ( হাদীস) উল্লেখ করছি :
১. হযরত ফাতিমা যাহরা ( আ ) বলেছেন: হযরত রাসূলুল্লাহ সা) ও হযরত আলী মুসলিম উম্মাহর পিতা ; যদি জনগণ ( উম্মত ) তাদেরকে অনুসরণ করে তাহলে তাঁরা ( রাসূলুল্লাহ ও হযরত আলী) তাদের ( উম্মত ) বক্রতা ও বিচ্যুতি সংশোধন করে তাদেরকে চিরস্থায়ী আযাব ( শাস্তি ) থেকে নাজাত ( মুক্তি) দেবেন এবং উম্মৎ যদি তাঁদের ( রাসূলুল্লাহ ও হযরত আলী) সহগামী ও সাহায্যকারী হয় তাহলে তারা ( রাসূলুল্লাহ ও হযরত আলী ) তাদেরকে ( উম্মত ) মহান আল্লাহর চিরস্থায়ী নেয়ামত প্রদান করবেন ( অর্থাৎ তাঁরা মহান আল্লাহর অনুমতি নিয়ে উম্মতের জন্য মহান আল্লাহর নেয়ামত সমূহের সুবন্দোবস্ত ও ব্যবস্থা করে দেবেন ) । " *
 
* কারণ মহানবী (সা) এবং তাঁর মাসূম পবিত্র আহলুল বাইত (আ) হচ্ছেন সৃষ্টি জগতের কাছে মহান আল্লাহর রহমত , বরকত ও নেয়ামত পৌঁছানোর তোরণ ও দ্বারদেশ অর্থাৎ বাব স্বরূপ । )
 
২. অপর এক রেওয়ায়তে বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ( আ ) বলেন : আমি রাসূলুল্লাহকে (সা) বলতে শুনেছি : আমি ও আলী এ উম্মতের পিতা এবং তাদের ওপর আমাদের ( রাসূলুল্লাহ ও হযরত আলী) হক ( অধিকার) তাদের নাসাবী ( রক্তের সম্পর্কের অর্থাৎ জন্মদাতা পিতাদের হকের ( অধিকার ) চেয়েও বড় ও মহান ( বেশি ) । কারণ , তারা ( উম্মত ) যদি আমাদের আনুগত্য করে তাহলে আমরা তাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করে চিরস্থায়ী শান্তির ধাম ও আবাসস্থলের ( বেহেশত ) দিকে নিয়ে যাব এবং মহান আল্লাহর প্রতি খাঁটি দাসত্ব করার মাধ্যমে ( গায়রুল্লাহর দাসত্ব বন্ধন থেকে মুক্ত করে) মুক্ত ও স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের মধ্যে যারা সর্বোত্তম তাদের কাতারে তাদেরকে ( উম্মত ) শামিল ও অন্তর্ভূক্ত করব ।
( সূত্র: আল্লামা মাজলিসী সংকলিত বিহারুল আনোয়ার ,খ : ২৩ , পৃ : ২৫৯ , বৈরূত , আল - ওয়াফা , ১৪০২ হি ) 
سمعتُ رسول الله (ص) بقول : أنا و علي أبوا هذه الأمّة و لَحَقُّنَا علیهم أعظم من حقّ أبوي وِلادتهم فَإنّها نُنْقِذُهُم إن أطاعونا من النار إلی دار القرار و نلحقهم من العبودیة بخیار الأحرار .
৩. মহানবী (সা) বলেছেন: আমি ও আলী এ উম্মতের পিতা।
أَنَا وَ عَلِيٌّ أَبَوَا هٰذِهِ الأُمَّةِ .
( সূত্র : আল - বুরহান ফী তাফসীরিল কুরআন, খ : ২ , পৃ : ৭৭ , সূরা -ই নিসা : ৩০- ৩৯ আয়াতের ব্যাখ্যায় ) 
আর এ হাদীসটি আল - ফায়েকের রচয়িতাও রিওয়ায়ত করেছেন।
আহলুল বাইতের ( আ ) হাদীসী সূত্র সমূহে এ হাদীস নি: সন্দেহে নির্ভর যোগ্য ( মু'তাবার ) হাদীস। কারণ তা অনেক হাদীস গ্রন্থ যেমন: বিহারুল আনোয়ার, ইলালুশ শারায়ে' , উয়ূনু আখবারির রিযা, আল - মানাকিব ইত্যাদিতে বর্ণিত হয়েছে ।  হাদীসে বর্ণিত ' পিতা ' নাসাবী  ( রক্ত সম্পর্কীয় অর্থাৎ জনক বা জন্মদাতা ) পিতার অর্থে নয় বরং এ পিতা ও পিতৃত্ব হচ্ছে আদর্শিক ও আধ্যাত্মিক - রূহানী পিতা ও পিতৃত্ব অর্থাৎ মহানবী ( সা ) ও ইমাম আলী ( আ ) মুসলিম উম্মাহকে সরল সঠিক পথে শিক্ষা - প্রশিক্ষণ দিয়েছেন এবং হিদায়ত করেছেন । এই দুই পিতা না হলে শিশু মুসলিম উম্মাহ পূর্ণতা , প্রগতি এবং উপযুক্ত ও যথার্থ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ লাভ করা থেকে বঞ্চিত হত ও বঞ্চিত থেকেই যেত । এখানে স্মর্তব্য যে মহানবী ( সা ) ও হযরত আলীর ( আ ) এ পিতৃত্ব বেলায়েতের মাকাম থেকে উৎসারিত পিতৃত্ব ( বেলাই  পিতা ও পিতৃত্ব الأبوة الولاییة) । গাদীর - ই খুমের হাদীসে (( আমি যার মওলা এ আলী তার মওলা [ من کنتُ مولاه فهذا عليٌّ مولاه ] ))  মওলা ও ওয়ালী এখানে অভিভাবক, তত্ত্বাবধায়ক , কর্তৃত্বশীল কর্তৃপক্ষ, পরিচালক, নেতা , পথপ্রদর্শক , প্রশাসক অর্থে ; তবে তা বন্ধু অর্থে নয় । আর এ অর্থে মওলা ও ওয়ালী এবং বেলায়েত আসলে পিতা ও পিতৃত্বের মতো । কারণ পিতা ( জনক ) সন্তানের ভরণপোষণ এবং তার সার্বিক বিষয়ের তত্ত্বাবধান করেন বলেই সন্তানের অভিভাবক এবং পিতৃ স্নেহ লাভ করে ও পিতার ছায়াতলে সন্তান প্রতিপালিত , প্রশিক্ষিত ও বিকশিত ও পূর্ণতা প্রাপ্ত হয় । কিন্তু উম্মতের অভিভাবক, তত্ত্বাবধায়ক ও পথপ্রদর্শক ( হাদী ) হিসেবে মওলা ও ওয়ালীর দায়িত্ব ঔরসজাত সন্তানের প্রতি স্নেহশীল জনক পিতার দায়িত্বের চেয়েও অনেক অনেক  মহান , বড় ও অধিক । আসলে এ ক্ষেত্রে তুলনাই চলে না । তাই রাসূলুল্লাহ (সা) ও হযরত আলী ( আ ) মওলা ও ওয়ালী হিসেবে স্নেহশীল নাসাবী ( রক্ত সম্পর্কীয় জন্মদাতা) পিতার চেয়েও অনেক অনেক বেশি স্নেহশীল, দয়ালু ও শুভাকাঙ্ক্ষী উম্মতের জন্য । আর এ কারণেই মহানবী ( সা ) ও হযরত আলী ( আ )  আধ্যাত্মিক ও রূহানী পিতা হিসেবে সন্তানের কাছে রক্ত সম্পর্কীয় স্নেহশীল   জন্মদাতা পিতার নৈকট্যের চাইতেও মুমিনদের কাছে মুমিনদের নিজেদের চাইতেও অধিক নিকটবর্তী ( আওলা أَوْلیٰ ) ।
 
তাই পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে : নবী ( সা ) মুমি নদের কাছে তাদের নিজেদের চাইতেও সর্বাধিক নিকটবর্তী ( আর এভাবে যে সর্বাধিক নিকটবর্তী সেই সর্বাধিক অগ্রাধিকার প্রাপ্ত  অর্থাৎ আওলা أَوْلَیٰ ) ...( সূরা -ই আহযাব : ৬ )। 
النَّبِيُّ أَوْلَیٰ بِالْمُؤْمِنِیْنَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ
আর গাদীর - ই খুমের দিবসে হযরত আলীকে (আ) উম্মতের মওলা বলে ঘোষণা দান কালে মহানবী ( সা ) আওলা ( অধিকতর নিকটবর্তী ও সর্বাধিক অগ্রাধিকার প্রাপ্ত ) শব্দটিও তাঁর গাদীর - ই খুমের খুতবায় ( ভাষণ ) ব্যবহার করেছেন। আমরা নীচে সুনান - ই ইবনে মাজাহ থেকে গাদীর -ই খুমের হাদীসের উদ্ধৃতি দিচ্ছি :
( সাহাবী) বার্রা ইবনে আযিব বলেন : মহানবী (সা) যে বিদায় হজ্জ  সম্পন্ন করেন সেই হজ্জে আমরা রাসূলুল্লাহর ( সা ) সাথে ফিরছিলাম (মদীনায়) ; তখন তিনি পথিমধ্যে যাত্রাবিরতি করলেন ( গাদীর-ই খুম নামক স্থানে ) । অত:পর তিনি জামাতে নামায আদায়ের আদেশ দিলেন। এরপর তিনি আলীর হাত ধরলেন এবং বললেন : " আমি মু'মিনদের নিজেদের কাছে তাদের নিজেদের ( সত্ত্বা ও প্রাণের) চেয়েও অধিক নিকটবর্তী ( সবচেয়ে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত অর্থাৎ আওলা ) নই কি ? " (তখন) সবাই বলল : " হ্যাঁ । " তিনি ( সা ) বললেন : " আমি প্রত্যেক মু'মিনের কাছে তার নিজের চাইতে অধিক নিকটবর্তী ( সর্বাধিক অগ্রাধিকার প্রাপ্ত) 
নই কি ? " সবাই ( তখন ) বলল : " হ্যাঁ । " তিনি ( সা ) বললেন : " সুতরাং এ ( আলী ) তার ওয়ালী ( কর্তৃত্বশীল কর্তৃপক্ষ , তত্ত্বাবধায়ক ও অভিভাবক ) যার আমি মওলা ( কর্তৃত্বশীল কর্তৃপক্ষ , তত্ত্বাবধায়ক ও অভিভাবক ) । হে আল্লাহ ! তাকে সমর্থন ও সাহায্য করুন যে তাকে সমর্থন ও সাহায্য করে এবং তার সাথে যে শত্রুতা করে তার সাথে শত্রুতা করুন । "
عن البراء بن عازب ، قال : أقبلنَا مع رسول الله - ص- في حِجّته الّتي حجّ . فنزل في بعض الطریق . فأمر الصلاة جامعةً . فأخذ بید عليّ ، فقال : « ألستُ أولیٰ بالمومنین من أنفسهم ؟ » قالوا : بلیٰ . قال : « ألستُ أولیٰ بِکُلّ مؤمن من نفسه ؟ » قالوا : بلیٰ . قال : « فهذا وليّ من أنا مولاه . اللهم والِ من والاه . اللهم عادِ من عاداه. » 
সুনান ইবনে মাজাহ্ , হযরত আলী ইবনে আবী তালিবের ( রা : ) ফযীলতের অধ্যায় , হাদীস নং ১১৬ , পৃ : ৩০ , ১ম সংস্করণ , ১৪২১ হি : মুদ্রিত , বৈরূত , লেবানন ।
 আল্লামা আলবানী এ হাদীস বর্ণনা করার পরে বলেছেন : " ( এ হাদীস) সহীহ । " ( দ্র: মুহাম্মদ নাসির আলবানী প্রণীত সহীহু ইবনে মাজাহ্ , খ : ১ , পৃ : ২৬ , হাদীস নং ১১৩ আল - মাকতাবাতুশ শামিলার প্রোগ্র্যাম অনুযায়ী )।
এই সহীহ হাদীস থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে সকল মু'মিনের কাছে তাদের নিজেদের ( সত্ত্বা ও জীবনের ) চেয়ে অধিক নিকটবর্তী ও সর্বাধিক অগ্রাধিকার প্রাপ্ত হওয়ার কারণেই মহানবী ( সা ) তাদের সবার মওলা ও ওয়ালী এবং মহানবী (সা) এ অর্থে যার মওলা ও ওয়ালী হবেন হযরত আলীও (আ) হবেন তার মওলা ও ওয়ালী । বলার আর অপেক্ষা রাখে না যে মওলা ও ওয়ালীর অর্থ একই এবং এই একই অর্থে মওলা ও ওয়ালী উপরিউক্ত হাদীসেও বর্ণিত হয়েছে। অতএব  মহানবী (সা) ও ইমাম আলী (আ) আওলা ( সবচেয়ে নিকটবর্তী ও অগ্রাধিকার প্রাপ্ত ) অর্থে এ উম্মতের মওলা ও ওয়ালী হওয়ার জন্যই তাদের ( এ উম্মত ) পিতা । তাই এ পিতৃত্ব বেলায়েত ও হিদায়তের মাকাম থেকে উৎসারিত পিতৃত্ব ।
সুতরাং স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে হযরত আলী ( আ ) মহানবীর (সা) মুসলিম উম্মাহর আধ্যাত্মিক ও রূহানী পিতা জাতির পিতা । আর তাই হযরত আলীর ( আ ) জন্ম দিবস ( ১৩ রজব ) ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে ' পিতা দিবস ' বলে ঘোষিত হয়েছে । আমরা ১৩ রজব ইমামুল আয়িম্মাহ্ ( ইমামদের ইমাম ) আমীরুল মু'মিনীন হযরত আলী ইবনে আবী তালিবের ( আ ) শুভ জন্মদিন এবং পিতা দিবস উপলক্ষে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ ও পিতাদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও মুবারক বাদ ।
 
 
পরিশিষ্ট :
সহীহুল বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে : 
মহানবী (সা) হযরত আলীকে বললেন : তুমি আমার থেকে এবং আমি তোমার থেকে। 
وَ قَالَ النَّبِيُّ - ص- لِعَلِيٍّ : « أَنْتَ مِنِّيْ وَ أَنَا مِنْکَ . » 
আর হযরত উমর বলেছেন : রাসূলুল্লাহ (সা) এমন অবস্থায় ইন্তেকাল করলেন যে তিনি ( সা ) তাঁর ( আলী ) প্রতি রাযী ( সন্তুষ্ট ) ছিলেন।
وَ قَالَ عُمَرُ : تُوُفِّيَ رَسُوْلُ اللّٰهُ - ص- وَ هُوَ عَنْهُ رَاضٍ .
দ্র : সহীহুল বুখারী , কিতাবু ফাযায়েলিস সাহাবা , বাব মানাকিবি আলী ইবনে আবী তালিব আল - কুরাশী আল - হাশিমী আবিল্ হাসান  ( রা : ) , পৃ : ৯০৭ , দারুল ফিকর, বৈরূত , লেবানন , ১ম সংস্করণ , ২০০৮ খ্রি : প্রাগুক্ত সহীহুল বুখারীতে সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস থেকে   বর্ণিত হয়েছে : তিনি ( সা'দ ) বলেন : রাসূলুল্লাহ (সা) তাবূকের দিকে বের হলেন এবং আলীকে ( মদীনায় ) প্রতিনিধি ও স্থলাভিষিক্ত করলেন । অত:পর তিনি (আলী) বললেন  : " আপনি কি আমাকে শিশু ও নারীদের মাঝে প্রতিনিধি ( খলীফা ) করে রেখে যাচ্ছেন ? " তিনি (সা) বললেন : " মূসার কাছে হারূনের শা'ন , মাকাম ,স্থান ও মর্য্যাদার ( মানযিলাত ) মতো আমার কাছে তোমার শা'ন , মাকাম , স্থান ও মর্য্যাদা যে হোক তাতে তুমি সন্তুষ্ট নও । তবে আমার পরে কোনো নবী নেই। " ( এ হাদীস হাদীস - ই মানযিলাত বলে খ্যাতি লাভ করেছে । )
عن مصعب بن سعد عن أبیه أَنّ رَسُوْلَ اللّٰهِ - ص - خَرَجَ إِلَیٰ تَبُوْکَ وَ اسْتَخْلَفَ عَلِیَّاً فَقَالَ : أَ تُخَلِّفُنِيْ فِي الصِّبْیَانِ وَ النِّسَاءِ ؟ قَالَ : « أَلَا تَرْضَیٰ أَنْ تَکُوْنَ مِنِّيْ بِمَنْزِلَةِ هَارُوْنَ مِنْ مُوْسَیٰ ، إِلَّا أَنَّهُ لَیْسَ نَبِيٌّ بَعْدِيْ .
প্রাগুক্ত সহীহুল বুখারী, কিতাবুল মাঘাযী , বাব গাযওয়াতি তাবূক , হাদীস নং ৪৪১৬ , পৃ : ১০৭৬ 
পূর্বোক্ত হাদীস থেকে স্পষ্ট হয় যে আলী ( আ ) রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে এবং রাসূলুল্লাহ (সা) আলী ( আ ) থেকে। আর পূর্বোক্ত হাদীস এবং হাদীস - ই মানযিলাত  থেকেও স্পষ্ট হয় যে  খতমে নুবুওয়ত হয়ে যাওয়ার কারণে একমাত্র নুবুওয়তের মাকাম ব্যতীত যে সব ধর্মীয় , আধ্যাত্মিক , রূহানী,   সামাজিক , রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মাকাম , বেলায়েত , নেতৃত্ব ( ইমামত ) ও হিদায়তের পদ রাসূলুল্লাহর (সা) জন্য নির্ধারিত আছে ঠিক সেগুলোই হযরত আলীর ( আ ) জন্যও নির্ধারিত আছে । মহানবী ( সা ) যদি উম্মতের মওলা , ওয়ালী এবং আদর্শিক ও রূহানী পিতা হন তাহলে হযরত আলীও অবশ্যই ( আ ) এ উম্মতের মওলা , ওয়ালী এবং আদর্শিক ও রূহানী পিতা হবেন এই দুই হাদীস অনুযায়ী। আর হাদীস - ই গাদীরে মহানবী (সা) হযরত আলীকে মুসলিম উম্মাহর মওলা ও ওয়ালী বলে ঘোষণা দেন। কারণ তিনি এ দিন ঘোষণা করেছিলেন যে  আলী ( আ ) তাদের ওয়ালী যাদের মওলা তিনি ( সা )। রাসূলুল্লাহ (সা) কাদের মওলা ও ওয়ালী ? তিনি মুসলিম উম্মাহর মওলা ও ওয়ালী। সুতরাং আলীও মুসলিম উম্মাহর মওলা ও ওয়ালী । আর এ আলোচনার শুরুতে রাসূলুল্লাহর হাদীস : তিনি (সা) বলেছেন : আমি ও আলী এ উম্মতের পিতা। আর এ বিষয়টি আলীকে রাসূলুল্লাহর বাণী : " তুমি আমার থেকে এবং আমি তোমার থেকে। " , হাদীস - ই মানযিলাত এবং গাদীর -ই খুমের হাদীস দ্বারাও সমর্থিত হয় । অর্থাৎ যেহেতু আলী রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে এবং রাসূলুল্লাহও (সা) তার ( আলী ) থেকে , যেহেতু মূসার কাছে হারূনের যে মাকাম রাসূলুল্লাহর (সা) কাছে আলীরও সেই মাকাম তবে মহানবীর পরে কোনো নবী নেই , এবং যেহেতু রাসূলুল্লাহ (সা) ও হযরত আলী (আ) মুসলিম উম্মাহর মওলা ও ওয়ালী এবং যেহেতু হযরত আরো অগণিত ফাযায়েলের অধিকারী ছিলেন   সেহেতু মহানবী (সা) বলেছেন : " আমি ও আলী এ উম্মতের পিতা। " আর এ সব থেকে প্রতিষ্ঠিত ও প্রমাণিত হয় যে  হযরত আলী হচ্ছেন এ উম্মাহর আদর্শিক, আধ্যাত্মিক - রূহানী পিতা হওয়ার যোগ্য ব্যক্তি বলেই রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁকে নিজের সাথে উম্মাহর আদর্শিক আধ্যাত্মিক রূহানী পিতা বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
 
ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
১৩ রজব , ১৪৪৪ হি.
ট্যাগ্সসমূহ: মুনীর হুসাইন খান
captcha