IQNA

ঈদের আগে খুলছে না বেশির ভাগ মার্কেট

2:41 - May 10, 2020
সংবাদ: 2610752
তেহরান (ইকনা)- স্বাস্থ্যবিধি মেনে আজ রবিবার থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে খোলা রাখা যাবে মার্কেট। রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং মলসহ কয়েকটি মার্কেট ঈদের আগে না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগেই। তাদের এ সিদ্ধান্তে অন্যান্য মার্কেটের দোকান মালিক সমিতিও মার্কেট বন্ধ রাখার ব্যাপারে অনুপ্রাণিত হয়। ফলে শেষ পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশে ঈদের আগে খুলছে না বেশির ভাগ মার্কেটই।

ঈদের আগে খুলছে না বেশির ভাগ মার্কেটকরোনাভাইরাস সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে শপিং মল খুলে দেওয়া উচিত হবে না বলে মনে করছে ৯৩ শতাংশ মানুষ। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক ফেসবুক জরিপে উঠে এসেছে এমন তথ্য।

গতকাল শনিবার আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের জন্য সিপিডির সুপারিশমালা উপস্থাপনের আগে ফেসবুক জরিপের এই ফলাফল জানান সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

এদিকে মার্কেট খোলার সিদ্ধান্তে গতকাল রাজধানীর সড়কে বেড়েছে মানুষ ও যানবাহনের উপস্থিতি। মুদি ও কাঁচাবাজার ছাড়াও অলিগলিতে প্রায় সব ধরনের দোকানপাটই খুলতে শুরু করেছে।

ঈদের আগে যেসব মার্কেট না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেগুলোর অন্যতম হলো বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, যমুনা ফিউচার পার্ক, বায়তুল মোকাররম মার্কেট, ঢাকা নিউ মার্কেট, মৌচাক, আনারকলি মার্কেট, মোতালিব প্লাজা ইত্যাদি। তবে রাজধানীর ইস্টার্ন প্লাজা, গাজী শপিং কমপ্লেক্স ও এলিফ্যান্ট রোডের সব দোকান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

অবশ্য সচেতন মানুষ বলছেন, তাঁরা এবার ঈদের কেনাকাটা করবেন না। দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এর আওতায় কাঁচাবাজার, মুদি ও ওষুধের দোকানসহ জরুরি সেবা বাদে অন্য সবই বন্ধ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সোমবার ঈদের কেনাকাটার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে দোকানপাট খোলার সুযোগ দেওয়া হবে জানান। এরপর ১০ মে থেকে মার্কেট, শপিং মল খুলে দেওয়ার আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা দেওয়া হয়। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মার্কেট ও শপিং মল খোলা রাখা যাবে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে গত বৃহস্পতিবার বলা হয়, ক্রেতারা নিজ নিজ এলাকার দুই কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত শপিং মলে ঘোষিত সময়ের মধ্যে কেনাকাটা করতে পারবেন।
সূত্র:
জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ঢাকায় শুধু একটি মার্কেট খোলার কথা জানিয়েছেন দোকান মালিকরা। তা হলো নিউ সুপার মার্কেট। অর্থাৎ বাকি সবই বন্ধ থাকছে। এ বিষয়ে মার্কেট সমিতির নেতাদের সঙ্গে আমার কথাও হয়েছে। আমি বলেছি স্বাস্থ্য সুরক্ষার সম্পূর্ণ ব্যবস্থা নিয়ে মার্কেট খুলতে।’

ঈদের আগে নিউ মার্কেট না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কেটটির মালিক সমিতি। গতকাল সরেজমিনে নিউ মার্কেটের ১ ও ২ নম্বর গেটে গিয়ে মার্কেটের গেট বন্ধ দেখা গেছে। ভেতরে কোনো দোকান খুলে সাফ করার দৃশ্যও চোখে পড়েনি। ১ নম্বর গেটের নিরাপত্তারক্ষী মোহাম্মদ নাজমুল কালের কণ্ঠকে জানান, ঈদের পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নিউ মার্কেট খোলা হতে পারে—মালিক পক্ষ থেকে তিনি এ কথা জেনেছেন। অন্তত ঈদের আগে মার্কেট খোলার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে তিনি জানান।

নিউ মার্কেটের ১ নম্বর গেটের পাশে বাইরের দিকে থাকা সিরাজ ম্যাগাজিন সেন্টার খোলা পাওয়া গেল। দোকানের মালিক সিরাজুল ইসলাম জানান, পত্রিকার দোকান হওয়ায় এটি লকডাউনেও খোলার সুযোগ আছে। কিন্তু নিউ মার্কেট বন্ধ থাকলে তাঁর দোকান খুলে লাভ নেই, কেউ আসেন না। দোকান ঝাড় দিতে অনেক দিন পর এসে বইপত্রগুলো দেখছেন ইঁদুরে কাটল কি না।

নিউ মার্কেটের পাশে থাকা গাউছিয়া মার্কেট, চাঁদনী চক মার্কেট, হকার্স মার্কেট ও চন্দ্রিমা মার্কেটও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিজ নিজ দোকান মালিক সমিতির নেতারা। গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে গাউছিয়া মার্কেটে গিয়ে সামনে বেশ কয়েকজন দোকান মালিকের দেখা পাওয়া গেল। তাঁরা জানালেন, নিউ মার্কেট না খুললেও গাউছিয়া ও হকার্স মার্কেট খুলতে পারে। তবে, বিকেল ৪টার দিকে ফোনে হকার্স ও গাউছিয়া মার্কেটের একাধিক দোকানের মালিক শহীদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, প্রথম দিকে মার্কেটের পাইকারি অংশ খোলার একটি সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ঈদ পর্যন্ত মার্কেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঈদের পরও খুব তাড়াতাড়ি দোকানপাট খোলার সম্ভাবনা নেই বলেও জানান তিনি।

আসন্ন ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর মিরপুরে শাহ আলী, মুক্তিযোদ্ধা, মোহাম্মাদিয়াসহ বিভিন্ন শপিং মল ঈদের আগে না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মিরপুর ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরাম। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ফোরামের সদস্যসচিব আতিকুর রহমান।

মিরপুর-১০ নম্বর সেকশনের শাহ আলী মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক কোষাধ্যক্ষ আবদুর রাজ্জাক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রথমে আমরা খোলার পক্ষে ছিলাম। পরে বিবেচনা করে দেখি, একটি জামাকাপড়ে অনেক মানুষের হাত পড়বে। এতে করোনা বিস্তার আরে বেড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া বেশির ভাগ দোকানের কর্মচারীরা ঢাকার বাইরে অবস্থান করছে। সে কারণে আমরা দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ঈদের আগে কোনো শপিং মল খোলা হচ্ছে না।’

তবে মিরপুর-১০ নম্বরসহ আশপাশের সড়কগুলোতে দেখা গেছে, ফুটপাতে জামাকাপড় থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের দোকান নিয়ে বসেছেন হকাররা।

এদিকে পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নিজ নিজ সিদ্ধান্তে খুলবে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই সরকারের স্বাস্থ্যবিধির সব শর্ত মানতে হবে। গত শুক্রবার রাতে জরুরি বৈঠক করে এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশীয় পোশাক ব্র্যান্ডগুলোর সংগঠন ফ্যাশন এন্টারপ্রেনার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এফইএবি)।

আউটলেটে বাড়তি নিরাপত্তা ও সব ধরনের সতর্কতামূলক স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিয়ে পণ্য কেনাবেচার জন্য খুলছে আড়ং। তবে হুটহাট পণ্য কিনতে গেলেই হবে না, যাওয়ার আগে অনলাইনে টাইমস্লট বুকিং দিতে হবে। ধধত্ড়হম.পড়স ওয়েবসাইটে গিয়ে নিকটতম আউটলেটে কেনাকাটার জন্য তারিখ ও সময় বুকিং দিতে হবে। আর নির্ধারিত সময়ে গিয়ে কেনাকাটা করতে পারবেন ক্রেতা। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত আউটলেট খোলা থাকবে। এক ঘণ্টা করে টাইমস্লটে ক্রেতারা পণ্য কিনতে পারবেন। প্রতি আউটলেটে প্রতি ঘণ্টায় দুই হাজার ৬০৩ জন ক্রেতা কেনাকাটা করতে পারবেন।

গতকাল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ব্র্যাক এন্টারপ্রাইজেসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর তামারা হাসান আবেদ বলেন, বুকিং ছাড়া কোনো ক্রেতা আসলে আউটলেটে স্থান ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে অথবা অন্য কারো বুকিং বাতিল হলে কেনাকাটার সুযোগ পাবেন। ভেতরে ক্রেতা ও আড়ংয়ের কর্মীরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবেন। মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে ‘ডিজিটাল পেমেন্ট’ উৎসাহিত করবে যা নগদ টাকা স্পর্শের মাধ্যমে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হবে।

রাজধানীতে সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কে মানুষ ও যানবাহনের উপস্থিতি বাড়ছে। মুদি দোকান ছাড়াও খুলতে শুরু করেছে অন্যান্য দোকানপাট। অলিগলিগুলো অনেকটাই স্বাভাবিক। তবে প্রধান সড়কের পাশে থাকা বড় বড় শোরুম বন্ধ ছিল। কাঁচা বাজার ও মুদি দোকান বন্ধের সময়সীমা ৪টা পর্যন্ত উন্নীত করায় আগের তুলনায় মানুষের ভিড় কমেছে। মানুষজন ঘর থেকে বের হলেও বেশির ভাগের মুখেই রয়েছে মাস্ক। আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা সদস্যদের কড়াকড়িও কমেছে অনেকটা।

দুপুরে মিরপুর, পুরান ঢাকার শ্যামবাজার, গেণ্ডারিয়া, সূত্রাপুর, পোস্তগোলা, আজিমপুর, লালবাগ এলাকা ঘুরে সড়কে, অলিগলিতে ব্যাপকসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি দেখা যায়। আসবাবের দোকান, টেইলার্স, ছোটখাটো ফ্যাশন হাউস, সেলুনসহ বিভিন্ন ধরনের দোকান খুলেছে।

ভাসানটেকের বিসমিল্লাহ ফার্নিচারের মালিক আবদুল লতিফ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দুই-তিন ধরে দোকান খুলেছি। আর কত দিন বসে থাকা যায়। মার্কেট খুলে যাচ্ছে, লোকজন চলাচল করছে, আমাদের দোকান খুললে সমস্যা কোথায়? কিছু বেচাকেনা হলে আমরা খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারি।’

চট্টগ্রাম নগরীতে ঈদ বাজারকে কেন্দ্র করে বড় বড় মার্কেটগুলোর ঝাপ ক্রেতাদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে না। নগরীর বড় মার্কেটগুলোর এমন সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ। গতকাল দুপুরে মহানগর পুলিশ কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে ব্যবসায়ীদের নিয়ে আয়োজিত এক সভায় এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। গত শুক্রবারই শীর্ষস্থানীয় মার্কেটগুলোর মালিক সমিতি সভা করে তাদের মার্কেট না খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল। এরই মধ্যে নতুনভাবে রিয়াজউদ্দিন বাজার, নিউ মার্কেট, তামাকুমণ্ডি লেন, জহুর মার্কেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

ময়মনসিংহেও আজ থেকে শপিং মল ও দোকান পাট খুলছে না। ক্রেতা বিক্রেতা সকলের মঙ্গলের কথা বিবেচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ময়মনসিংহের সর্বস্তরের ব্যবসায়ী নেতারা। জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আমিনুল হক শামীম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র: kalerkantho

captcha