রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন তার ভাষণে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের যৌক্তিকতা বা আইনগত ব্যাখ্যা তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন, জাতিসংঘ সনদের সপ্তম অনুচ্ছেদের ৫১তম ধারা অনুযায়ী এবং দোনেস্ক ও লুগানেস্ককে সহায়তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ইউক্রেনের বিরুদ্ধে বিশেষ সামরিক অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেছেন, সম্ভাব্য যে কোনো রক্তপাতের জন্য ইউক্রেন সরকার দায়ী থাকবে।
প্রেসিডেন্ট পুতিন পূর্ব ইউক্রেনের দোনেস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন দেশ হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পর এবং ওই এলাকার নেতারাও সাহায্যের জন্য পুতিনের প্রতি অনুরোধ জানানোর পর ব্যাপকভাবে ধারনা করা হচ্ছিল রাশিয়া সামরিক অভিযান চালাবে। সে অনুযায়ী আজ ভোর থেকে ইউক্রেনের বিমানঘাঁটিসহ বিভিন্ন সামরিক স্থাপনার ওপর রাশিয়া হামলা শুরু করেছে। এরই মধ্যে রুশ সেনারা দোনবাসসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকার দিকে অগ্রাভিযান শুরু করেছে। এদিকে, কিয়েভ সরকার লুহানস্কের দুটি শহর দখল করে নেয়ার খবর দিয়েছে। আবার কোনো কোনো সূত্রে জানা গেছে রাশিয়ার স্থল বাহিনী কৃষ্ণ সাগর উপকূলবর্তী মারিওপোল ও উডিসা বন্দর শহরে প্রবেশ করেছে।
বাস্তবতা হচ্ছে, রাশিয়ার শীর্ষ কর্মকর্তারা বারবার ইউক্রেন সরকারকে সতর্ক করে দেয়ার পরও কিয়েভ কর্তৃপক্ষ এ সতর্কবার্তাকে উপেক্ষা করায় শেষ পর্যন্ত রাশিয়া তাদের হুমকি বাস্তবায়ন করল। পুতিনের বক্তব্যের পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক বিবৃতিতে ইউক্রেনে যে কোনো সংঘাত কিংবা প্রাণহানির জন্য রাশিয়া দায়ী থাকবে বলে সতর্ক করে দেন। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, বর্তমান অবস্থার জন্য সরাসরি ওয়াশিংটনই দায়ী। কেননা তারা রাশিয়ার হুমকিকে বরাবরই উপেক্ষা করে এসেছে।
বলা যায় ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নয়া অধ্যায়ের সূচনা করবে। তুরস্কের খ্যাতনামা রাজনৈতিক বিশ্লেষক বোরহান উদ্দিন দুরান মনে করেন, ধারনা করা হচ্ছে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে বিরাজমান মতপার্থক্য অচলাবস্থার মুখে এসে পৌঁছেছে এবং সমাধানের আপাতত কোনো আশা নেই। এ বিষয়টি বিশ্বজুড়ে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পাল্টে দিতে পারে। ইউক্রেনে সংঘাত বাধার আগে ন্যাটো জোট ও আমেরিকার সাথে রাশিয়ার রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বাদানুবাদ চলছিল। মস্কো বহুবার তার সীমান্তের দিকে ন্যাটো জোটের সামরিক তৎপরতা ও সেনা মোতায়েনের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল তাদের এ কার্যক্রম রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি। কিন্তু মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট রাশিয়ার এ আপত্তিকে আমলে নেয়নি।
যাইহোক, বর্তমানে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন আবারো সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে তাদের সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে বাইরের যে কেউ হস্তক্ষেপ করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখাবে মস্কো। পার্সটুডে